আপনার সঙ্গে আজও কথা হয়
------------------------------
এই তো সেদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধের পর রাস্তার উলটোদিকে তাকিয়ে দেখলাম অসংখ্য
নাইটকুইন ফুটে আছে। স্ট্রিট লাইটের আলো ফিকে লাগছিল। আমাদের মনে পড়ছিল আপনার
কথা। সন্ধে থেকে মোবাইল ক্যামেরা হাতে আপনি বসে থাকতেন নাইটকুইনের ফুটে ওঠার অপেক্ষায়
আপনার ছাদবাগানে। আপনি বলতেন, ভালো হাত ছাড়া লেখা যায় না, রান্নাও হয় না, বাগানও না।
আপনি প্রভাত চৌধুরী, আপনি ঠিক বলতেন।
ছয়ের দশক থেকে প্রতি দশকে নতুন কবিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আপনি প্রতিনিয়ত কবিতা
আপডেট করে গেছেন। ৭৭ বছর শুধু বহমান সময়, আপনার প্ৰছন্ন যৌবনকে তা কখনও দমিয়ে
রাখতে পারেনি। আপনি সময়কে থামিয়ে দিতে পেরেছিলেন যৌবনের মুঠোর মধ্যে। নার্সিংহোম
থেকে আপনি কবিতা লিখেছেন। ডায়ালিসিস চলছে, তখনও লিখেছেন ডায়ালিসিস পর্বের
কবিতা। বাংলা সাহিত্যজগতে আপনি সময়, আপনি যুগ, আপনি বাঁকবদল, আপনি সন্ধিক্ষণ।
নয়ের দশক থেকে আপনার সম্পাদনায় প্রকাশিত কবিতা পাক্ষিক হয়ে উঠেছিল নতুন লিখতে আসা
কবিদের আঁতুড়ঘর। যৌবনকে আপনি সাহস জুগিয়েছেন নতুন কিছু লিখতে। জোরালোভাবে
আপনি একই কথা বলতেন, ভালো হোক মন্দ হোক, লেখা হতে হবে নতুন, একঘেয়ে লেখা কেন
পাঠক পড়বে। শব্দকে বাজাতে হবে অন্যভাবে। আপনি এও বলতেন যা চোখে দেখি আর যা দেখি
না, দুই লেখায় উঠে আসবে।
ছেলেমানুষি খুশিতে আপনি নিজেও কি বেজে উঠতেন না প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে? হ্যাঁ,
আপনার জন্মদিন। এই তো সামনেই। সেদিনও রাতের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াব। জানি না নাইটকুইন ফুটে উঠবে কি না। আনন্দের সঙ্গে মানাব আপনার জন্মদিন। আপনার মৃত্যু আমরা স্বীকার করি না,
পরোয়া করি না, জানি আপনি আছেন কবিতায় রান্নায় বাগান পরিচর্যায় প্রশ্রয় স্নেহ ভালোবাসায়।
আপনি বলেছিলেন ১৪০০ সাল এবং ময়ূখ যত্ন নিয়ে প্রকাশ করতে। মনে রেখেছি, চেষ্টা করছি।
১৪০০ সাল সম্মাননা আপনার হাতে তুলে দিতে না পারলেও আপনাকে জানিয়েছিলাম। না, দুঃখ
করছি না, আপনি পছন্দ করেন না। কাকিমার (যূথিকা চৌধুরী) কাছে পৌঁছে দিয়েছি। অজয়
দাশগুপ্ত স্মারক সম্মাননা এবং ১৪০০ সাল সম্মাননা অনুষ্ঠানে আপনার ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে
দাঁড়িয়ে সাহসী হয়ে কত কথা বলে ফেললাম। আজকাল স্পষ্ট কথা মুখের উপর বলতে পারি
অনেককেই।
জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে আপনি থাকবেন তো আমাদের সঙ্গে বারান্দায়? আমাদের বাড়ি দেখার ইচ্ছা ছিল,
আসুন, আমরা কিন্তু অপেক্ষায় থাকব।
বাহ ভালো লিখেছেন দিদি
উত্তরমুছুনখুব ভালো লিখেছ।
উত্তরমুছুনকবিতা অন্তঃপ্রাণ মানুষটা সেভাবে সম্মান পাননি। তবু এক সময় তার মূল্যায়ন হবে এই আশা রাখি।
উত্তরমুছুনপ্রভাতবাবুর সঙ্গে কতটা গভীর য়ছিল সম্পর্ক, বোঝা যাচ্ছে। প্রত্যেক সংখ্যাতেই উনি প্রবল ভাবে থাকছেন।
উত্তরমুছুনসুন্দর আর উপযুক্ত প্রতিবেদন। কবিকে শ্রদ্ধা। আপনাকে অভিনন্দন জানাই।
উত্তরমুছুনএক মর্মস্পর্শী সম্পাদকীয়
উত্তরমুছুন