ধারাবাহিক উপন্যাস : বাণীব্রত চক্রবর্তী

 




বাণীব্রত  চক্রবর্তী


ধারাবাহিক  উপন্যাস 

          কালতরঙ্গ
      

                  বারো

মীরা  ও কিঞ্জল পাশাপাশি  হাঁটছে। দুজনের মন খুশিতে ডগমগ করছে। স্মরজিৎ রাজি হয়েছেন।  সপ্তাহে  একটা দিন  ওদের  ফরাসি শেখাবেন। প্রত্যেক  রবিবার  বিকেল  পাঁচটা থেকে  সন্ধে ছ'টা পর্যন্ত। ওদের জন্য  ফ্রেঞ্চ লার্নিংয়ের একটা  বই তিনি  ঠিক করে দিয়েছেন। বইয়ের দাম পঞ্চাশ টাকা। এই ১৯৬৯-এ পঞ্চাশ টাকা কি কম!
 মীরা সঙ্গে টাকা  এনেছে। বইয়ের দাম শুনে কিঞ্জলের মুখ  শুকিয়ে গিয়েছিল। তার  ওয়ালেটে সবসুদ্ধ বাইশ টাকা আছে। মীরা  চোখের ইঙ্গিতে  কিঞ্জলকে অভয় দিয়েছিল । তারপর জিজ্ঞেস করেছিল , " ওই বই কি কলেজ স্ট্রিটৈ পাব? " স্মরজিৎ মাথা  নেড়ে  বলেছিলেন, " না। কলেজ স্ট্রিটে পাবে না। তোমাদের  পার্কস্ট্রিটে যেতে হবে।  ওখানে  ফ্রেঞ্চ বুকশপ আছে। সকাল  দশটা থেকে  রাত দশটা পর্যন্ত  সোমবার থেকে  শনিবার  দোকান  খোলা।  ওখানে চলে  যেও।"
     সেদিন তালতলার  বাড়ি থেকে  বেরিয়ে ওরা কিন্তু   বই কিনতে  যায়নি। যদিও মীরা বারবার  বলেছিল, " চিন্তা করছিস কেন ! আমার পার্সে দুশো টাকা আছে।" কিঞ্জল বলেছিল, " না আজ নয়। মনে  মনে একটা প্ল্যান করেছি। মেট্রোতে " কাম সেপ্টেম্বর " মুভিটা  এসেছে। রক হাডসন হিরো। কামিং সাটার ডে ওই মুভি  ম্যাটিনি শোয়ে দেখব। ছবি দেখে তারপর  পার্কস্ট্রিটে গিয়ে  বই কিনব।" কিঞ্জলের প্রোপোজালে মীরা রাজি হয়ে গিয়েছিল।  এবং  কিঞ্জলকে জিজ্ঞেস করেছিল, " বুদ্ধদেব বসুর " মেট্রোতে বুড়ি " গল্পটা পড়েছিস? " কিঞ্জল বলেছিল, " হ্যাঁ । হ্যাঁ। পড়েছি। আমার  কাছে  " অদ্ভুত যত ভূতের গল্প" বইটা আছে। ছেলেবেলায় বড়মামা আমাকে  জন্মদিনে উপহার  দিয়েছিলেন। তাতে  ওই গা ছমছম করা ভূতের গল্পটা আছে।" মীরা  বালিকার মতো সোচ্ছ্বাসে বলেছিল, " কী আশ্চর্য ! আমিও ছেলেবেলায় ওই বইটা জন্মদিনে উপহার  পেয়েছিলাম। তবে বড়মামার কাছ থেকে  নয়। প্রেজেন্ট করেছিলেন  আমার  সোনামাসি। কী সুন্দর বই। মোট ষোলোটা গল্প  আছে। এখনও মাঝে মাঝে ওই বইটা পড়ি। "
     আজ শনিবার। ওরা  "কাম সেপ্টেম্বর " দেখে  পার্কস্ট্রিটের দিকে হাঁটছে। কিঞ্জল জিজ্ঞেস করল, " রক হাডসনকে  কেমন  লাগল ? "  মীরা  বলল, " দারুণ। কী স্মার্ট। "  কিঞ্জল জানতে চাইল, " উত্তমকুমারের চেয়েও ভালো  লাগল ! " মীরা বলল, " উত্তমকুমার উত্তমকুমার। জানিস, আমার কিন্তু   শশী কাপুরকে  দারুণ  লাগে। বিশেষ করে ওঁর গজদাঁতটার জন্য। আর হাসিটা ! সো কিউট।" কিঞ্জল বলল, " একেবারে পারফেক্ট বলেছিস। "
  ওরা এখন  পার্কস্ট্রিটের দিকে  হাঁটছে। চৌরঙ্গিতে মানুষের ঢল নেমেছে। মনুমেন্টের মাথার ওপর  দিয়ে  একটা রুপোলি রঙের  প্লেন উড়ে  যাচ্ছে।